প্রকাশ :
'রোববার দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে পুষ্প কমল দাহালকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নেপালের সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী পুষ্প কমল দাহালকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট। এর আগে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের সব সদস্যকে ডেকে সরকার গঠনে শনিবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদের ২ ধারা অনুযায়ী দুই বা ততোধিক দলের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী যে কেউ প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন। রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ৬৮ বছর বয়সী প্রচণ্ড বিরোধীদের সঙ্গে জোট গড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর মনোনয়নপত্র জমা দেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সোমবার বিকেল ৪টায় নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। নেপালের রাজনৈতিক একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, প্রেসিডেন্টের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে দেশটির রাজনৈতিক দল সিপিএন-ইউএমএলের চেয়ারম্যান কে পি শর্মা অলি, রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির (আরএসপি) প্রেসিডেন্ট রবি লামিছানে, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির প্রধান রাজেন্দ্র লিংডেনসহ অন্যান্য শীর্ষ রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুষ্প কমল দাহাল। পরে তাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যান তিনি। নেপালে গত মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে দেশটির কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। পরে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেন পুষ্প কমল দাহাল।'
'দেশটির ২৭৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে প্রচণ্ডের পক্ষে ১৬৫ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে। যার মধ্যে সিপিএন-ইউএমএলের ৭৮ জন সিপিএন-এমসির ৩২, আরএসপির ২০, আরপিপির ১৪, জেএসপির ১২ জনমত পার্টির ৬ এবং নাগরিক উনমুক্তি পার্টির ৩ জন আইনপ্রণেতা রয়েছেন। নেপালের হিন্দু রাজতন্ত্র অবসানের লক্ষ্যে পরিচালিত এক দশকের গেরিলা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া প্রচণ্ড তৃতীয়বারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
'নেপালের তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন পুষ্প কমল দাহাল'
১৯৫৪ সালের ১১ ডিসেম্বর পোখারার কাছের কাস্কি জেলার ধিকুরপোখারিতে জন্ম নেওয়া প্রচণ্ড প্রায় ১৩ বছর ধরে আড়ালে থেকে মাওবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এক দশকের দীর্ঘ সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে সিপিএন-মাওবাদী সেন্টারের শান্তিপূর্ণ রাজনীতি শুরুর পর নেপালের মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক দশক সশস্ত্র সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; যা শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালের নভেম্বরে ব্যাপক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়।'
'এর আগে, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলির বাসভবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সিপিএন-মাওবাদী সেন্টার এবং অন্যান্য ছোট দলগুলো প্রচণ্ডের নেতৃত্বে সরকার গঠনে সম্মত হয়। প্রচণ্ড ও অলির বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার জন্য একটি সমঝোতা হয়েছে। অলির দাবি অনুযায়ী, প্রথম দফায় প্রচণ্ডকে প্রধানমন্ত্রী করতে রাজি হয়েছেন তিনি। জোটের সমঝোতা অনুযায়ী, নতুন সরকারে প্রথম আড়াই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন প্রচণ্ড। এরপর জোটসঙ্গী ও প্রধান বিরোধীদল ইউএমএলের একজন নেতা বাকি আড়াই বছরের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী হবেন। গত মাসের জাতীয় নির্বাচনে নেপালের ২৭৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে কোনও রাজনৈতিক দলই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৮ আসন পায়নি। যে কারণে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে জোট গড়ে সরকার গঠনের পথে হাঁটলেন সিপিএন-মাওবাদী সেন্টারের চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড।'-সূত্র: এনডিটিভি, কাঠমাণ্ডু পোস্ট।